কিছু বিলম্ব হলেও সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে সরকার। ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে লিখিত চুক্তিসহ অর্থ পরিশোধ সত্ত্বেও এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা যথাসময়ে না দেয়ায় বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এমনকি সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে গোপনীয়তা রক্ষার শর্তে দেশেই টিকা উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনও মিলেছে। জরুরী ব্যবহারের জন্য ইতোমধ্যে রাশিয়ার তৈরি স্পুটনিক টিকা অনুমোদন ও আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে। সরকার টু সরকার পদ্ধতিতে মে মাসের মধ্যে রাশিয়া থেকে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ ডোজ টিকা দেশে আসার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। করোনার বিরুদ্ধে এই টিকার কার্যকারিতা ৯১ শতাংশ। অন্যদিকে চীনের সঙ্গেও চলেছে আলোচনা। দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি মোকাবেলায় অন্যতম পরাশক্তি চীন বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে একটি জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। ভারতকে চীন আমন্ত্রণ জানিয়েছে এই জোটে যোগ দিতে। এর উদ্দেশ্য হলো করোনা মোকাবেলায় জরুরী মেডিক্যাল সেবা দান এবং পরবর্তীতে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং ই-কমার্সের উন্নয়ন। এতে চীনের টিকা পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা পরবর্তীতে উৎপাদিত হবে দেশেই। এর পাশাপাশি চেষ্টা চলছে মেডিক্যাল অক্সিজেনসহ আনুষঙ্গিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহের। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, দেশে টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ চলছে একই সময়ে। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৬ লাখ মানুষ টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছে। টিকা পাওয়া গেছে ১ কোটি ২০ লাখ। ৮ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া। নিবন্ধনকৃতদের প্রথম ডোজ চলছে। এপ্রিলের শেষ অথবা মে’র শুরুতে আরও টিকা আসবে। অর্থায়নে এগিয়ে এসেছে বিশ্বব্যাংক, এডিবি। সুতরাং অর্থের কোন অভাব হবে না। কিন্তু এখন ভারত থেকে টিকা পাওয়া যাচ্ছে না সময়মতো। চুক্তি অনুযায়ী ছয় মাসের মধ্যে তিন কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোপূর্বে জাতিসংঘ ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাকে করোনার টিকা বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন, যেটি যথার্থ ও সময়োপযোগী। তবে দুঃখজনক হলো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ট্রিপস চুক্তির আওতায় টিকার মেধা সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও দাম নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। ফলে সারাবিশ্বে টিকার সুষম বণ্টন ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ হচ্ছে না। টিকা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উন্নয়নশীল ও গরিব দেশগুলো। এই মুহূর্তে অন্তত এক শ’ কোটি ডোজ টিকা কিনে নিয়েছে বিশ্বের ৩টি উন্নত দেশ। ফলে বাকি দেশগুলোতে দেখা দিয়েছে টিকার জন্য হাহাকার, যা কাম্য নয় কোন অবস্থাতেই। উল্লেখ্য, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত টিকা মূলত যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ও ব্রিটিশ-সুইডিশ কোম্পানি এ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথ গবেষণার ফসল। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী এই টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশও এই টিকা পেয়েছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যা সরকার দিয়েছে বিনামূল্যে। কোল্ড চেইন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশে এই টিকা এনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে সরবরাহ করছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিশেষ সাফল্য রয়েছে, যার স্বীকৃতি মিলেছে জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক। বাংলাদেশ যথাসময়ে ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকাদানের মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনে সক্ষম হবে বলে প্রত্যাশা। তবে এর জন্য বিকল্প দেশ থেকে টিকা সংগ্রহের পাশাপাশি দেশে টিকা তৈরির সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে। গ্লোব বায়োটেকের টিকাটি নিয়েও অগ্রসর হওয়া যেতে পারে।
Leave a Reply